শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে সাক্ষ্য প্রদান সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং সাক্ষ্য আইন: আমাদের করনীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত উত্তরায় কাজী ড্রাইভিং স্কুলের উদ্যোগে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত শেখ রাসেলের ৬১তম জন্মদিন পালনের আহ্বান আ.লীগের ৩ দিনব্যাপী জলবায়ু অর্থায়ন, প্রকল্প ধারণাপত্র ও আর্থিক প্রস্তাবনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত জনগনের সেবায় নিয়োজিত বোয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম ২০২৪ অনুষ্ঠিত লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে সারাজীবন কাজ করেছি : আলাউদ্দিন নাসিম মুলাদীর বোয়ালিয়া নির্বাসী ইয়াছিন হাওলাদারের পরিবার মেজবাহ উদ্দিন গংদের হয়রানীর শিকার মুলাদীর বোয়ালিয়ার জুলেখা বেগম জমি বিক্রি করে প্রতি পক্ষ জাফর ও আমির কর্তৃক হয়রানির শিকার

প্রতিমাশিল্পীরা বলছেন, কাজ বেড়েছে তবে সেই তুলনায় পারিশ্রমিক বাড়েনি

উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২০ অক্টোবর মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। হাতের জাদুতে ও রং-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরি দিয়ে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে। এ ছাড়া কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমাও তৈরি করছেন শিল্পীরা।

সরেজমিনে পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল রোডের শ্রীশ্রী প্রাণ বল্লভ জিঁউ মন্দিরসহ শাঁখারিবাজার ও সূত্রাপুরে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরিতে আবার কেউবা রং করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। দিনরাত এর পেছনে সময় ব্যয় করছেন তারা।

প্রতিমাশিল্পীরা বলছেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি পারিশ্রমিক। এদিকে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ, যা সংগ্রহ করতে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে তাদের।

প্রতিমাশিল্পী বলাই পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। এবার দেশের পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় সবাই ভালোভাবে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে কারণে কাজ বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় পুরান ঢাকা এই নর্থব্রুক হল রোডে আমি ১২টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। পূজারিদের চাহিদা অনুযায়ী এবার প্রতিমার আকার ও ডিজাইনে ভিন্নতা এসেছে। বর্তমানে আমাদের মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আর দু-এক দিনের মধ্যে পুরোপুরি রঙের কাজও শেষ করতে পারবো। পূজা শুরুর কয়েক দিন আগে প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে শিল্পীদের

প্রতিমা তৈরির ব্যয় ও নিজের পারিশ্রমিক সম্পর্কে বলাই পাল বলেন, আমরা আগে যে বাঁশ ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে হয়। আগে দুই-তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডবের প্রতিমা হয়ে যেত, এখন ছয় থেকে সাত হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। পাঁচ বছর আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, এখন খরচ হয় দেড় লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, এখন ইন্টারনেটের যুগ। এ কারণে ইউটিউব-ফেসবুকে দেখে অনেকে কলকাতার আদলে প্রতিমা তৈরির অর্ডার দেন। আমরাও সেভাবেই প্রতিমা তৈরি করছি। তবে আমাদের দেশের চিরায়ত মলিন ভক্তিভাবাপন্ন সুদর্শন হাসিমুখের প্রতিমা বেশির ভাগ পূজারি পছন্দ করে এবং এভাবে প্রতিমা তৈরির অর্ডার দেন। এতে খরচও বাড়ে।

প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, বংশপরম্পরায় আমি এই মৃৎশিল্পের কারিগর। আমার পূর্বপুরুষরা একই কাজ করে গেছেন। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনও কাজও জানা নেই। বছরের এই সময়ে আমাদের তুমুল ব্যস্ততা যায়, বাকি সময় টুকটাক কাজ করি। অন্যরা অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবকিছুর দাম এখন আকাশচুম্বী। তা ছাড়া অনেকে এখন মেশিন দিয়ে কাজ করে। তিন জন মজুরের জায়গায় দুজন লাগে। এ জন্য কম বেতন হলেও কাজ করা লাগে। নয়তো অন্য কোনও উপায় নেই।

ভালোভাবে পূজা উদযাপনের আশা করছে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক বছর কাজ বেশি পাইনি। এবার ভালো কাজ পেয়েছি। কিন্তু যে উপকরণ গত বছর ১৪ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটা এবার ৩০ হাজার। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই হারে পারিশ্রমিক যদি বাড়তো, তাহলে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করতে কষ্ট হতো না।

কারিগর রাখাল পাল বলেন, বেশির ভাগ প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে রঙ ও সাজসজ্জার কাজ। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রং-বেরঙের শাড়ি, অলংকার ও মাথার মুকুট দিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন ধীরে ধীরে সেগুলোর কাজ করবো।

প্রতিমা তৈরিতে কেমন খরচ হচ্ছে এবং পূর্বের তুলনায় পারিশ্রমিক বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নে রাখাল বলেন, প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক বস্তা মাটির (৫০ কেজির) দাম দুই-আড়াই হাজার টাকা। আছে পরিবহন খরচ। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।

গতবারের চেয়ে এবার ভালোভাবে পূজা উদযাপনের আশা করছে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আবার কেউ কেউ এ বছর নির্বাচনের হাওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত।

সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটাকে কেন্দ্র করে যেন কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই প্রত্যাশা এই সম্প্রদায়ের মানুষের

শাঁখারিবাজারের বাসিন্দা সুজন ঘোষ বলেন, পূজায় ঢাকা তেমন কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে না। তবে দেশব্যাপী পূজা এলে একদল প্রতিমা ভাঙচুর করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটাকে কেন্দ্র করে যেন কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের পূজা উদযাপন করতে।

উল্লেখ্য, বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা অনুযায়ী, দুর্গাপুজা ২০২৩-এর নির্ঘণ্ট এবার মহালয়া পড়েছে ১৪ অক্টোবর। জানা গেছে, এ বছরের মহালয়ার অমাবস্যাতেই রয়েছে গ্রহণ। ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) অমাবস্যা মুহূর্ত শুরু হবে রাত ১০টায় এবং অমাবস্যা মুহূর্ত শেষ হবে ১৪ অক্টোবর রাত ১১টা ২০ মিনিটে।

সনাতন ধর্মাবলম্বী পণ্ডিতরা জানিয়েছেন, আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহাসপ্তমী পড়ছে আগামী ২১ অক্টোবর শনিবার। মহাষ্টমী পড়ছে ২২ অক্টোবর। সন্ধিপূজা বিকাল ৪টা ৫৪ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হবে ৫টা ৪২ মিনিটে। বিকাল ৪টা ৫৪ গতে সন্ধিপূজা শুরু। ৫টা ১৮ মিনিটের মধ্যে সেরে নিতে হবে বলিদান। ৫টা ৪২ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজার সমাপ্তি। মহানবমী পড়ছে ২৩ অক্টোবর ও বিজয়া দশমী পড়ছে ২৪ অক্টোবর।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com